ঝিকরগাছায় খুনসহ ডাকাতি ও যশোরে ৩টি দূর্ধর্ষ চুরির ঘটনার সাথে জড়িত ১২ জনকে আটক করেছে যশোরের ডিবি পুলিশ। ডিবির একটি টিম কুষ্টিয়া, রাজবাড়ি, বরিশাল, ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ জেলায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে আটক করে। আটককৃতদের কাছ থেকে ১২ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার ও ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। আর ট্রাকটি ওই চোর ডাকাত চক্রের নিজেদের।

এ সংক্রান্তে ২৪ আগস্ট বিকেলে যশোরের পুলিশ সুপার প্রলয় কুমার জোয়ারদার প্রেস ব্রিফিং করেছেন। আটককৃতরা হচ্ছে, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার উত্তমপুর গ্রামের ইউনুসের ছেলে শাওন ইসলাম ওরফে সোহাগ, পটুয়াখালী সদর উপজেলার শেখহাটি গ্রামের লোকমান মৃধার ছেলে মাহাতাব মৃধা, একই এলাকার সিরাজ খাঁর ছেলে রিয়াজ খাঁ, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার বিহারীপুর গ্রামের মৃত কাঞ্চন তালুকদারের ছেলে শামীম তালুকদার, নন্দপুর গ্রামের কবির মোল্লার ছেলে মাসুম মোল্লা, বীরাদ্দন গ্রামের ফজলু হাওলাদারের ছেলে সবুজ হাওলাদার, বিহারীপুর গ্রামের ইব্রাহিম খানের ছেলে শহিদুল খান, পটুয়াখালী সদর উপজেলার বদরপুর গ্রামের শাহজান সিকদারের ছেলে সোহাগ সিকদার, খুলনা জেলার ডুমুরিয়া উপজেলার শরাফপুর গ্রামের ইমদাদুল শেখের ছেলে রাসেদুল ইসলাম রাসেল, বাগেরহাট জেলার মোরেলগঞ্জ উপজেলার জিবদারা গ্রামের সোবাহান খানের ছেলে এনামুল খান, বরিশাল জেলার বাকেরগঞ্জ উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের মোক্তার সিকদারের ছেলে শিপন সিকদার ও ঢাকার কেরানীগঞ্জ উপজেলার পূর্ববন্ধ ডাকপাড়ার বাসিন্দা ও বরিশালের বানরিপাড়া উপজেলার বড় চাউলকাঠি গ্রামের আশরাফ আলীর ছেলে এমাদুল ইসলাম। আটককৃতদের মধ্যে রাসেল, এনামুল, সিপন সিকদার ও এমাদুল ডাকাতি ও চোরাইপন্য কেনাবেচার সাথে জড়িত অপর আটজন সরাসরি ডাকাতি ও চুরির সাথে জড়িত বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

২৪ আগস্ট বিকেল ৪ টায় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলণে এসপি প্রলয় কুমার জোয়ারদার আরও জানান, সংঘবদ্ধ চক্রটি নিজেদের ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন জেলায় ঘুরে বেড়ায়। যেখানে চুরির সুযোগ পায় সেখান থেকে তারা চুরি করে। এছাড়া ডাকাতির সুযোগ পেলে ডাকাতি করে ওইসব পণ্য ট্রাকে করে ওই জেলা থেকে অন্য জেলায় সটকে পরে। পরে সেসব পন্য দেশের বিভিন্ন জেলায় কুরিয়ার কিংবা নির্ধারিত সিন্ডিকেটের সদস্যদের মাধ্যমে বিক্রি করে।

ঠিক একইভাবে গত ১৩ আগস্ট রাতে তারা ঝিকরগাছার কৃষ্ণনগর রাজাপট্টির ঝিকরগাছা অটো ইলেকট্রনিক্যাল ওয়ার্কসকে তারা ডাকাতি করে। এসময় নৈশ প্রহরী আব্দুস সামাদকে হত্যা করে প্রায় আড়াইলাখ টাকার মালামাল লুট করে নিয়ে যায়। অনুরুপভাবে যশোর শহরের উপশহর এলাকার সিকদার মটরস থেকে ৩৭ লাখ ২০ হাজার টাকার মালামাল, মুড়লি মোড়ের মেসার্স কর্নফুলী ট্রেডার্স থেকে ১৬ লাখ ৭২ হাজার ৫শ’ টাকার মালামাল ও বকচরের খাদিজা এন্টার প্রাইজ থেকে সাত লাখ ৯০ হাজার ২শ’ টাকার মালামাল লুট করে। ওই সব মালামালের মধ্যে ছিলো ব্যাটারী, লুব্রিকেন্টস ও মটর পার্টসের যন্ত্রাংশ।

KKHC 2

এসব ঘটনায় পৃথক চারটি মামলা হয়। এ মামলাগুলোর তদন্তভার ডিবির উপর দেয়া হয়। ডিবি পুলিশ এ বিষয়ে অভিযানে নামে। বিভিন্ন জেলায় গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। শেষমেষ গত ২৩ আগস্ট গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বরিশাল-ঝালকাঠি মহাসড়কে একটি পেট্রোলপাম্পে ডাকাতি প্রস্তুতিকালে যশোরের ডিবি পুলিশ হাতেনাতে ওই ডাকাতকে আটক করে। পরে তারা যশোরের এসব ডাকাতি ও চুরি এবং নৈশ প্রহরীকে হত্যার কথা স্বীকার করে। একে একে বেরিয়ে আসে থলের বিড়াল।

চট্টগ্রাম, বরিশাল ও ঢাকার বিভিন্ন এলাকা থেকে ১২ লাখ ২০ হাজার টাকার চোরাই পন্য, ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয় ও অপর চার আসামিকে আটক করা হয়। উদ্ধারকৃত পণ্যের মধ্যে রয়েছে ঝিকরগাছা থেকে ডাকাতি হওয়া দুই লাখ ২০ হাজার টাকার ব্যাটারী, উপশহর থেকে চুরি হওয়া তিন লাখ চার হাজার ৭শ’ ২০ টাকার লুব্রিকেন্ট, বকচর থেকে চুরি হওয়া পাঁচলাখ ৪৬ হাজার টাকার ২১টি টায়ার, মুড়লি মোড় থেকে চুরি হওয়া এক লাখ ৮৪ হাজার ২শ’৫০ টাকার লুব্রিকেন্ট। এছাড়া একটি ট্রাক ও হত্যায় ব্যবহৃত স্কচটেপ ও ১২ টি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়।

এ বিষয়ে ডিবির ওসি রুপন কুমার সরকার জানান, আটক ১২ আসামিকে ওই চারটি মামলায় আটক দেখানো হয়েছে। তাদের মধ্যে ডাকাতি ও হত্যাকান্ডে জড়িত কয়েকজন আদালতে স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দি দিয়েছেন। অন্যদের জবানবন্দি গ্রহণের প্রস্তুতি চলছে।